বিসিএস- এর শেষ অধ্যায় এর প্রত্যুত্তরে

 

পরশপাথর

 

 

জনাব প্রদীপ দেবকে প্রথমে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি বিষয় নিয়ে ( বিসিএস- এর শেষ অধ্যায় ) কথা বলবার জন্যতবে কিছুটা মর্মাহত হয়েছি যখন বললেন,বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে এটাই আমার শেষ লেখাশেষ লেখা হবে কেন? অন্যায় বা অনিয়ম যতদিন থাকবে ততদিনই কি তার প্রতিবাদ করা উচি নয়? নাকি কোনদিন বলবেন, এটাই আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ প্রতিবাদ   

 

২৭তম বিসিএস এর কিছু বিশেষ দিক নিয়ে আমি এর আগেই আমার রনিনের বাংলাদেশলেখায় লিখেছিকিন্তু আপনি যে ব্যাপার নিয়ে দ্বিতীয়বার অনুর্তীর্ণদের আন্দোলনের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন, সেটা নিয়ে একটু বলিআমাদের এখানে মিডিয়াগুলো কি পরিমাণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেই ব্যাপারে আপনি নিশ্চয় অবগত আছেনদ্বিতীয়বারের আন্দোলন জোরদার হওয়ার এবং দ্বিতীয়বার পরীক্ষা হবার পূর্বের আন্দোলন দুর্বল হবার কারণ কিন্তু এই মিডিয়াই

 

কথিত আছে যে, এবারের শক্তিশালী আন্দোলন মিডিয়া কাভারেজ দেবার জন্য একটি বিশেষ পত্রিকাকে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মত হাতে তুলে দিতে হয়েছিলতাদের যুক্তিও খুব সহজ সরলটাকা না দিলে রিপোর্টার কেন শুধু শুধু পিএসসিতে গিয়ে, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফাইল পত্র দেখে তথ্য বের করে নিয়ে আসবে। বের করে নিয়ে আসবে যে কোটা অনুসরণ করা হয়নি, নিয়ম মানা হয়নি। তাছাড়া রিপোর্টাররা যেভাবে তথ্য আদায় করে নিয়ে আসতে পারবেন আমাদের মত সাধারণদেরতো সেই তথ্য জানতেই দেয়া হবেনাআপনাকে ফাঁসি দেয়া হবে,কিন্তু কেন দেয়া হবে সেটা আপনাকে জানানো হবেনা, জানানো হবে পত্রিকার রিপোর্টারকেএটাই এদেশের নিয়ম। অন্যদিকে পত্রিকায় রিপোর্ট না আসলে কর্তাব্যক্তিরাতো কোন কিছুকেই আমলে নেন নাআপনি হয়তো জেনে থাকবেন বড় বড় অফিসের বড় বড় অফিসাররা কিছু করতে গেলে সবসময় আতঙ্কে থাকেন কখন আবার পত্রিকায় রিপোর্ট হয়ে যায়কিন্তু তারা কখনো ভুলেও ভাবেন না তাদের কোন সিদ্ধান্তে কারো অধিকার খর্ব হয়ে যায় কিনা? সেটাতে তাদের কিছুই যায় আসেনা। এখানে অধিকারের থেকে রিপোর্টিং অনেক বেশি গুরুত্ববহ।

 

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমবার যখন আন্দোলন বা প্রতিবাদ করার উদ্যোগ নেয়া হয় তখন দেশে জরুরী অবস্থা এত তীব্রমাত্রায় কার্যকর ছিল যে হাসিনা-খালেদারা নাকানি চুবানি খাচ্ছিলো, সমস্ত দেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছিলো। স্বাভাবিকভাবেই সে সময়ের আন্দোলন বেগবান করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সে সময় আন্দোলনকারীরা চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলো। আমি আপনার এই যুক্তির সাথে একমত যে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা যখন দেয়া হচ্ছিলো তখন তাদের বোঝা উচি ছিল যে, হয় তারা পাশ করবেন না হয় ফেল করবেনকিন্তু সমস্যাতো সেখানে নয়সমস্যা অন্য জায়গায়পিএসসি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নীতবহির্ভূতভাবে কোটা প্রথা থেকে দূরে সরে আসেসবগুলো নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করে নিজস্ব নিয়ম চাপিয়ে দেয় তারাআন্দোলনটার ভিত্তিও সেখানেই

 

তবে যাই হয়ে থাকনা কেন, যে একটা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস ছিলো সেটা ধ্বংস হয়ে গেছেএদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হয়তো আরো কিছুদিন ছুটবে, জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে যাওয়া অসহায় ছাত্রছাত্রীরা আবারো বিসিএস দেবেকিন্তু যে পারবে এই নষ্ট সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যেতে, সে কিন্তু ঠিক এ বেরিয়ে যাবে, যেমনটি করে বেরিয়ে গেছে রনিনকে নিয়ে আমার লেখা গল্পের সেই রনিনদ্বিতীয়বারের পরীক্ষার পর রনিনের মেধাক্রম আগের থেকে পঁচিশ ধাপ এগিয়ে এসেছেতার অবস্থান মেধাতালিকার প্রথম ৩০ জনের মাঝেএকদা সরকারী চাকুরী করে দেশ সেবা করবার স্বপ্ন দেখা সে রনিনের আর ফেরা হয়নি সরকারী চাকুরীতে। কে জানে, রনিনদের সার্ভিসের কল্যাণেই হয়ত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে ইউরোপ আমেরিকার অর্থনীতি

 

[email protected]

Nov 28, 2008