বাসুনকে, মা
লুনা শীরিন
পর্ব ৪০
বাসুন,
আজকে দুপুর বেলা আলু কাটছিলাম, খুব সাধারন একটা কাজ প্রায়ই সময়ই করি, কিন্তু কেমন করে যেন আজ দুপুরেই মনে হলো তোকে আজকের দিনটার কথা লিখে রাখবো । বাবু, তোর বাবার সাথে আমি সংসার শুরু করেছিলাম ১৯৯৬ সালে, যদিও বিয়ে হয়েছিলো আগের বছর কিন্তু সেই বছরই যেহেতু আমার এমএ পরীক্ষা ছিলো তাই পরের বছর থেকে সংসার শুরু আমাদের। মনে আছে, জাহাঙ্গীরনগর থেকে আমি সরাসরি আমাদের ইকবাল রোডের তিনতালা বাড়ির আড়াইতালার গ্যারেজের উপরে তৈরী হওয়া চারকোনা একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলো তোর বাবা সেখানেই উঠেছিলাম আমি, ওই একটা মাত্রই ঘর, ওই আমাদের সংসার। ঘরের ভিতরই দাড়ানো যায় এমন একটা বাথরুম আর সিড়ি দিয়ে তিনধাপ নামলেই যেহেতু ঘরটা চোখে পড়ে, তাই ওই সিড়ির মুখেই একটা ড়্যাকের উপরে গ্যাসের এক বার্নারের একটা চুলা বসানো ছিলো, আসলে ঘরটা ছিলো একজন ব্যাচেলর এর থাকার জন্য। ওই সিড়িতে জুতা গুছিয়ে রাখতাম আমি, মানুষ ডুকলেই জুতা ও চুলা একসাথেই দেখতে পেতো, আর সেখানে দাড়িয়েই আমি যাবতীয় রান্না সারতাম। তোর বাবা ও আমি ঢাকাতে মোট তিনটে ভাড়া বাড়িতে ছিলাম, কোন বাড়িতেই আমাদের খাট, ডাইনিং রুম বা টেবিল, শোবার ঘর বা বসবার ঘর ছিলো না, আমাদের সবই ছিলো একরুমের ঘরে, আর আজ এতবছর পরে মনে হচ্ছে সেই দিনগুলোই ছিলো জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। এমন কি তুই যে বছর জন্ম হলি সে বছরই তোর নানীআপু আমাকে একটা শোবার খাট দিয়োছলো। ১৯৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি আমার সংসারে এসেছিলাম আমার হোস্টেলের রুমের হাড়ি /পাতিল/মশলার কৌটাকুটি নিয়ে, এমন কি কাথা বালিশও ছিলো আমার সাথে। সেগুলো দিয়েই দিব্যি তোর বাবার সাথে প্রথম দুবছর সংসার চালিয়ে নিয়েছিলাম, আমার কোন অসুবিধাই হয়নি (কে আসেনি আমাদের সেই ইকবাল রোডের বাড়িতে? আজকের ঢাকা শহরের বিখ্যাত অনেকেই আমার একরুমের ঘরে দিনের পর দিন আড্ডা মেরেছে . আজকের র্কাটুনিষ্ট শিশির ভট্টাচার্ষ, ফিন্মমেকার তারেক মাসুদ, অর্থনীতিবীদ এম এম আকাশ, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান, আমার প্রিয় শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, নারীবাদী শামীম আখতার এমন অনেকেই নিত্য যাওয়া আসা করতো আমাদের ঘরে) বরং সেই সময়ই ঢাকাতে আমারই সমসাময়িক অনেকের কথা মনে পড়ে যারা এপার্টমেন্ট কিনে সংসার শুরু করেছিলো। সেই তুলনায় আমার নিজেকে বরাবরই অনেক বেশী শক্তিশালী মনে হতো কারন তোর বাবা আর আমি দুজনই বেসরকারী সংস্থাতে কাজ করতাম বলেই আমরা নানানভাবে জীবনকে দেখতে পেরেছিলাম বা উপভোগ করতে পেরেছিলাম যা হয়তো সাজানো গোছানো পরিপাটি জীবনে থাকলে কখনই পারতাম না। জানিস বাবু, যে কোন কারনেই হোক আমি আর তোর বাবা একসাথে থাকিনি কিন্তু আমার জীবনের অনেকগুলো শ্রেষ্ঠ সময়ে তোর বাবা আমার সাথে ছিলো, সেই স্মৃতিচারণে তো কোন অপরাধ নেই? আমরা একসাথে থাকিনি বলেই কি আমাদের সময়গুলোকেও দোষারোপ করতে হবে? পৃথিবী এতটা পিছিয়ে নেই বাবু, বরং সেই সময়গুলোর কথা এখন যত দ্ধিধাহীন মনে আমি লিখতে পারছি একটা ঝুকিপুর্ন সম্পর্ক তোর বাবার সাথে দীর্ঘায়িত করলে কোনদিনই তা নিঃসংকোচে লিখতে পারতাম না।
তারপর শোন, আলু ছিলার কথা বলছিলাম তোকে,একদিন সকালে তোর এক জলি ফুপা ও ফুপা এলো আমাদের বাড়িতে ( বাবু, তোর এই ফুপু ও ফুপা আমার জীবনে দেখা দুই একজন শ্রেষ্ট মানুষদের দুজন), আমি তাড়াহুড়ো করে আলু ছিলছি, জলি আপা কখন পিছনে এসে দাড়িয়েছেন টের পাইনি, হোস্টেলে থাকতে তো রান্না করেই খেতাম তাই মুঠো হাতের ভিতর আলু রেখে আমি চাকু দিয়ে আলু কুচি কুচি করে দ্রুত কড়াইতে ছাড়ছি, আপা আমার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, বাহ তুই তো ভালই আলু ছিলিস। খুব সামান্য একটা কথা, আমার সংসার করার বয়স তখনো একমাস হয়নি, আজো এই টরোন্টো শহরে ঝকঝকে এপার্টমেন্টে কার্টার বোর্ডে আলু রেখে কুচি কুচি করছিলাম আমি, আমার হাতে সেদিনের মতোই চাকু ছিলো, তখনই জলি আপার মুখটা সামনে চলে এলো, আহ কি ভীষণ ভালোবাসা পেয়েছিলাম আমি তোর বাবার আর সব ভাইবোনদের কাছ থেকে, কোনদিনই মনে হয় সেই স্মৃতিগুলো ভোলা হবে না। এই জলি আপাকেই বিয়ের আগে তোর নানীআপু বলেছিলো,আমার মেয়েটা কিন্তু একটু পাগল, জলি আপা সাথে সাথেই বলেছিলো, পাগল বলেই তো আমরা ওকে নিয়ে যাবো। স্বভাবে যে জলি আপা আমাকে ছাড়িয়ে আরো পাগল ছিলো সেটা টের পেয়েছিলাম কিছুদিনের ভিতরই। আর আজকে এই বরফের শহরে জীবনের অনেকটা সময় বয়ে যাবার পর টের পাচ্ছি সত্যিকার পাগলই কেবল ভালোবাসার জন্য সব করতো পারে বা জীবনে মৌলিক মানুষ হতে পারে। বাবু, তোর বাবার সাথে কিছু বছর ছিলাম বলেই তুই আমার জীবনে আছিস, এই সত্য যতদিন আছে ততদিন তোর বাবাই তোর কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষ হবে। আগামীকাল ২০ শে নভেম্বর সোনা, তোর জন্মদিন। ১৯৯৯ সালের ১৯ শে নভেম্বর এ রাত বারোটায় আমাকে ঢাকাতে সেন্ট্রাল হসপিটালে নেয়া হয়েছিলো, তুই পৃথিবীতে এসেছিস রাত দেড়টায়, তাই তারিখটা ২০ হয়ে গেলো। সেদিন আমাকে ঘিরে ছিলো অসংখ্য মানুষ আর আজকে এই শহরে শুধু তুই আর আমি, টরোন্টোতে আজ ৫ সেন্টিমিটার বরফ এর সিগন্যাল দিয়েছে, তোর বাবা বাংলাদেশ থেকে ফোন করেছিলো দশমিনিট আগে তুই দশ বছরে পা দিবি সোনা, এতটা বছর তোর বাবার সাথে তোর যে নিবিড় যোগাযোগ আছে, আগামীতেও তা থাকবে। তোর বাবা ও আমি যেদিন থেকে সামাজিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি সেদিন থেকেই তোকে নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি আমাদের, এই জায়গাটুকুতে তোর বাবা আর দশটা বাবার চেয়েও সৎ বাবু, এই সত্য স্বীকারে কোন অপরাধ তো দেখিনা সোনা আমি। তোর জন্মদিনে আমাদের দুজনেরই আদর ও ভালোবাসা বাবু, সুস্থ্য ও মানবিক মানুষ হয়ে উঠবি, শুধু এইটুকুই চাওয়া, আজ রাতে ঘুমতে গিয়ে তোর কপালে এটা বড় করে চুমু দেবো সোনা।
তোর মা,
১৯ শে নভেম্বর ।২০০৮
টরোন্টো ।
nahid kabirke bolchi,
luna shirin tar shamir sathe nishchoi shokh kore alada hoyni. shokh kore ghor badha jae alada hoa jaena. koshto payai alada hote badho hoy. shai koshter dag muche fela eto sohoj noy nahid.ami janina bashuner baba nuton kore ghor bedhechen kina naki tineo luna shiriner moto sonnash jibon japon korchen, jodi emon hoy tahole ami bishash kori erai hoche prithibir ideal baba-ma, ar ao bishash kori ekdin na ekdin eder milon hobai.jodi ar bahire kichu hoy thake tahole vabte hobe erai hoche sob chay boro protarok.luna shiriner sonnasher mukhosh pore sai protaronake aral kora jabena kichutai. tai bolchilam bashuner prokrito manush hobar projonai take ashol sottota jante dite hobe eta tar odhikar. amake maf korben nahid,oti sadharon kichutai ami khub uttejito hoy pori.
Luna
Tui j sahosh kore ei lekha gulo likhis eta ka jon pare?
Amader moto traditional bangalee meyeder jibone divorce mane hocche prakton sami- se tor chiro jiboner sotru. Tui j sei concept theke beriye aste perechis eta ka jon pare?
Tor kach theke onek singla mother aar father der sekhar ache j kivabe ekta baccha manush kora jai. Baccha nosto hoye gelo dosh hoye jai broken familyr kingba divorce initiate koreche j baba kingba mayer. Othocho nitto diner birodh dekhe j chele ba meyata boro hoi tar cheye ki tor aar Nayyar ei jibonta onek sundor noi?
aker proti oporer eto srodha ar valobasha thaka sotteo keno apnara eksathe thakte parlenna vobishote bashuner ai proshner uttor janar pryojon hote pare.
tar baba-ma ekshathe thakte pareni ai sotto ar koshtoke bohon korai bashunke sara jibon poth cholte hobe.
ami doa kori allah jeno tar sohae hoy.
bashnke jonmo diner ador.
তালাত, আপনি অভ্র ডাউনলোড করে মন্তব্য করছেন দেখে ভাল লাগলো। লুনা, আপনিও ডাউনলোড করে নিন । তাহলেই বাংলায় কমেন্ট করতে পারবেন। ডাউনলোড করার লিঙ্ক এখানে –
http://www.omicronlab.com/avro-keyboard.html
আপনি দেখলাম গীতা দাসের প্রবন্ধে এ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন। ফরিদ ভাই ওখানে এর উত্তরও দিয়েছেন। অভ্র টুলটা বেশ ভাল। ইংরেজীতে টাইপ করলেই বাংলা হয়ে যায়। এ ছাড়া আপনি যদি বিজয় টাইপিং এ অভ্যস্ত হন, তবে ইন্সটল করার সময় বিজয় কিবোর্ড লেআউট অপশনটা বেছে নিতে পারেন। কোন ঝামেলা হলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।
আমি এই উইকেন্ডে কিছু বটন এড করে ব্লগে মন্তব্য করার ফীচারকে আরো আকর্ষনীয় এবং ইউজারফ্রেন্ডলি করে ফেলব বলে ভাবছি। এর ফলে মন্তব্য করার সময় বোল্ড, ইটালিক করা যাবে, লিঙ্ক করা যাবে অন্য কোণ সাইট বা প্রবন্ধের সাথে। ছবি এড করার ব্যবস্থাও করে দেব। আপনাদের ফিডব্যাক চাই এ ব্যাপারে।
লুনা শীরিন আপুর লেখা পড়ে খালি আবেগে আমার চোখে পানি আসে … এত অসাধারণ হৃদয় ছোয়ানো লেখা আগে কখনো চোখে পড়ে নি। আমি প্রতিবার যখনই মুক্তমনা visit করি তখনই উন্মুখ হয়ে থাকি যে শীরিন আপুর “বাসুনকে মা”-র নতুন কিস্তী বের হলো কিনা। ছোট্ট সোনামনি বাসুনকে অনেক অনেক আদর , আর জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বাসুন সোণামনি আরো অনেক অনেক বড় হোক, পৃথিবীকে জয় করুক…. এই প্রত্যাশায় রইলাম। লুনা আপু আপনার জ়ীবনও অনেক অনেক পড়ে রয়েছে…. আপনি জীবন সংগ্রামে জয়ী এক নারী… আপনি আরোও সফল হোন…
বাসুন সোনামণিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা,সেই সাথে জীবনযুদ্ধে লড়াকু মাকেও।
শুভ জন্মদিন, বাসুন!
লুনা শীরিনের কারণে বাসুন নামের এক ফুটফুটে বালক এখন মুক্তমনার অতি পরিচিত এবং পরম ভালবাসার একজন হয়ে উঠেছে। আজ তার নবম জন্মদিন। মুক্তমনার পক্ষ থেকে বাসুনের জন্য জন্মদিনের অফুরন্ত শুভেচ্ছা এবং আদর। সেই সাথে মায়ের মত প্রবল স্বাধীনচেতা এবং দৃপ্ত সংগ্রামী মানসিকতা নিয়ে বড় হয়ে উঠুক এই কামনা রইলো।